স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের লাখো বেকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আধুনিক শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় পাঁচ দশক আগে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরী (বিসিক)। প্রথম পর্যায়ে ভালোভাবে চললেও মাঝখানে বিভিন্ন কারণে মুখ থুবড়ে পরে শিল্প নগরীর কার্যক্রম। তবে সম্প্রতিকালে বেশ কিছু আধুনিক শিল্প ব্যবসায়ী বিসিক নগরীতে ব্যবসা শুরু করলে এবং সরকার থেকে উন্নয়ন মূলক কিছু প্রকল্প শুরু হলে ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করে বিসিক শিল্প নগরী। কিন্তু সরকারের উন্নয়ন পরিপন্থী একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন কৌশলে বিসিক শিল্প নগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও উৎপাদন বিনষ্ট করার নিমিত্তে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে জানা যায়। যে খবরটি ইতোমধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত অবগত হয়েছে। জানা গেছে, বিসিক শিল্প নগরী নিয়ে সরকারের উদ্বিগ্নতা নিরসনে উদঘাটণের লক্ষ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা সরকারের কাছে সুপারিশসহ অবহিত করার বিষয়ে কাজ করছে। কিছুদিন আগে সেখানকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালের সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বিসিক শিল্প নগরী পরিদর্শন করেন। ফলে উদ্যোক্তা ও স্থানীয়দের মনে বিসিক নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা ও উৎপাদন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষাই এখন সেখানকার বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকদের একমাত্র চাওয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিকের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, একসময় বিসিক ছিল আতংকের নগরী। মাদক আর সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল জায়গাটি। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একাধিক হতাহতেরর খবর পাওয়া গেছে। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিসিকের চিত্র বদলাতে শুরু করে। উদ্যোক্তাদের বিসিক মুখি করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়।এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে বিসিকের চেহারা। এরমধ্যে একাধিক নিরেট ব্যবসায়ীমনা উদ্দোক্তা বিসিকে তাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করে। যাদের মধ্যে সেখানকার ফরচুন সুজ কোম্পানির মালিক মোঃ মিজানুর রহমান অন্যতম। তিনি বিসিকের শিল্প মালিক সমিতির নেতা হবার পর সেখানকার সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগ দেন। কিন্তু একটি অপগোষ্ঠী নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বানচালে একাট্টা হয়। বরিশালবাসী মনে করে এই অপগোষ্ঠীকে রুখতে নগর পিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আাব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক ও বিসিকের প্রতিষ্ঠিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একটি সমন্বিত কমিটি করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে হবে। আর উক্ত অপগোষ্ঠী তাদের চক্রান্তে সফল হলে মুখ থুবড়ে পড়বে বরিশাল বিসিক। এমনটাই মনে করেন বিসিকের একাধিক শিল্প মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, বিসিকের সর্ববৃহৎ রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ কোম্পানী। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় জুতা তৈরির কারখানা। যেখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সাথে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা কর (ট্যাক্স) পায় সরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্তা এবং বিসিকের শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। মিজানুর রহমানের কাছ থেকে চাঁদা এবং বিসিকের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকার ভাগ না পাওয়ায় মূলত অদৃশ্য কিন্তু ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ। এই ক্ষোভের কারণেই বিসিকের উন্নয়ন মূলক কাজ এবং ফরচুন সুজের উৎপাদন কাজে নানাভাবে বাঁধা দিচ্ছে ঐ গোষ্ঠী। আর এতে করে নষ্ট হচ্ছে সেখানে ব্যবসার পরিবেশ। এদিকে বিসিকের প্রাণখ্যাত ফরচুন সুজ কোম্পানি’র অন্যতম পরিচালক শফিউল আজম জানান, সততার সঙ্গে ব্যবসা করে যাওয়ায় এবং সমাজে অবদান রাখায় দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তাদের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মোঃ মিজানুর রহমান ২০১৮ সালে আইএফআইসি ব্যাংক বর্ষসেরা উদ্যোক্তা খেতাব এবং স্যার সলিমুল্লাহ বিজনেস এওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়া বিশ্ব নন্দিত ম্যাগাজিন ফোর্বস গতবছর বিশ্বের উদীয়মান তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হিসেবে ফরচুন সুজকে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে বরিশালের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমতাবস্থায় বিসিকে যেকোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এই সুবৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যদের বিপাকে ফেলবে। এতে করে বিসিকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবার চিন্তা করবে তেমনি জেলার বেকার সমস্যার ওপর চাপ বাড়বে।
Leave a Reply